সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মার্কিন পতাকা নামিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উড়লো ফিলিস্তিনি পতাকা! বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরও দুর্বল হচ্ছে: ওবায়দুল কাদের বিষয়টি আদালতেই সুরাহার চেষ্টা করব, হাইকোর্টের নির্দেশনা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী গাজার ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করতে সৌদিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় দেশ থেকে আইনের শাসন উধাও হয়ে গেছে : মির্জা ফখরুল স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ১১৫৫ টাকা তীব্র তাপপ্রবাহ : স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশ হাইকোর্টের মঙ্গলবারও ঢাকাসহ ২৭ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
ভারতে বারবার ট্রেন লাইনচ্যুতের নেপথ্যে কী

ভারতে বারবার ট্রেন লাইনচ্যুতের নেপথ্যে কী

স্বদেশ ডেস্ক:

ভারতের ওড়িশায় গত শুক্রবারের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত নয় শতাধিক। দেশটির রেল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, সিগন্যাল ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় এবং এখনো এর উত্তর নেই। খবর বিবিসির।

দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশার একটি ছোট স্টেশনের কাছে দুটি দ্রুতগতির যাত্রীবাহী ট্রেন এবং একটি মালবাহী ট্রেনের ত্রিমুখী সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। তাদের মধ্যে একটি চলন্ত ট্রেন এসে স্থির মালবাহী ট্রেনকে ধাক্কা দেয়।

এতে ওই ট্রেনের কোচগুলো পাশের তৃতীয় লাইনে উল্টে যায়, যার ফলে ওই লাইনে আগত ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। এই দুর্ঘটনার পিছনের সত্য উদঘাটনে ব্যাপক তদন্তের প্রয়োজন। তবুও এটি আবারও ভারতে রেলওয়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগকে নতুন করে সামনে এনেছে।

ভারতের বিস্তৃত রেল ব্যবস্থা, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ হিসাবে খ্যাত। এক লাখ কিলোমিটার মানে ৬২ হাজার মাইলেরও বেশি বিস্তৃত রেললাইন সারা দেশকে এক বিশাল নেটওয়ার্কে জুড়ে রেখেছে। বছরে আড়াই কোটিরও বেশি যাত্রী এই রেল লাইন ব্যবহার করে।

ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের মতে, গত বছর প্রায় ৫ হাজার ২০০ কিলোমিটার নতুন ট্র্যাক স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতি বছর আট হাজার কিলোমিটার রেল লাইন আপগ্রেড করা হচ্ছে বলে মন্ত্রী জানান।

বৈষ্ণব সম্প্রতি বলেছেন যে, বেশিরভাগ রেললাইন আপগ্রেড করা হচ্ছে যেন এর ওপর ট্রেনগুলো ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য অংশে ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিতে চলাচলের জন্য রেললাইনকে উন্নত করা হচ্ছে এবং আরেকটি উল্লেখযোগ্য অংশ এমনভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে যেন ট্রেনগুলো ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে।

তবুও দেশটিতে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়া, দেশটির রেলওয়ে খাতের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির রেলওয়ে বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান, বিবেক সাহাই এমনটাই বলেছেন।

তিনি বলেন, একটি ট্রেন বিভিন্ন কারণে লাইনচ্যুত হতে পারে- রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হতে পারে, ত্রুটিপূর্ণ কোচের কারণে হতে পারে এবং ট্রেন চালনায় সমস্যা থেকেও হতে পারে।

ভারতের সরকারি রেলওয়ে সেফটি রিপোর্ট ২০১৯-২০-এ দেখা গেছে, রেল দুর্ঘটনার ৭০ শতাংশ ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়া কারণে ঘটেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬৮ শতাংশ বেশি। এর পরের দুইটি কারণ হচ্ছে, ট্রেনের অগ্নিকাণ্ড এবং সংঘর্ষ, যা যথাক্রমে মোট দুর্ঘটনার ১৪ শতাংশ এবং আট শতাংশ। প্রতিবেদনে ৪০টি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা গণনা করা হয়েছে – এরমধ্যে ৩৩টি যাত্রীবাহী ট্রেন এবং সাতটি মালবাহী ট্রেন।

এর মধ্যে ১৭টি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে রেললাইনে ত্রুটি থাকার কারণে – যার মধ্যে ফাটল এবং রেললাইনের সংকোচন-প্রশমন দুটি বড় কারণ। রিপোর্ট অনুযায়ী ট্রেন-ইঞ্জিন, কোচ, ওয়াগনে ত্রুটির কারণে মাত্র নয়টি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়া ধাতুতে তৈরি রেললাইনগুলো গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রসারিত হয় এবং শীতকালে তাপমাত্রার ওঠানামার কারণে সংকোচনের মধ্য দিয়ে যায়। এজন্য এই রেললাইনগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।

ঢিলে হয়ে থাকা লাইনগুলোকে টাইট দেয়া, নিয়মিত স্লিপার পরিবর্তন করা এবং অ্যাডজাস্টিং সুইচগুলোকে লুব্রিকেন্ট দিয়ে পিচ্ছিল রাখা জরুরী এজন্য। এ ধরনের রেললাইন সাধারণত পায়ে হেঁটে অথবা ট্রলি, লোকোমোটিভ এবং রিয়ার ভেহিকলে চড়ে পরীক্ষা করা হয়।

ভারতের রেলপথগুলোর সক্ষমতা ট্র্যাক রেকর্ডিং কারের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। মূলত লাইনের ওপর দিয়ে ট্রেনগুলো প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে কিনা এবং লাইনগুলো সে অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়েছে কিনা সেটা মূল্যায়ন করে থাকে।

২০১০ সালে পশ্চিমবঙ্গে এক যাত্রীবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে আসতে থাকা মালবাহী ট্রেনের সাথে সংঘর্ষে ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন। তদন্তকারীরা বলেছেন, মাওবাদীরা রেললাইনে নাশকতা করার কারণে কলকাতা-মুম্বাই যাত্রীবাহী ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়েছিল। ওই ঘটনায় পাঁচটি যাত্রীবাহী বগি পাশের লাইনে ছিটকে পড়ে। এবং ওই লাইনে আসতে থাকা মালবাহী ট্রেনের সাথে সংঘর্ষ হয়। তবে শুক্রবারের দুর্ঘটনায় এখনও কোনও নাশকতার আভাস পাওয়া যায়নি।

ভারতীয় রেলওয়ের মতে, ২০২১-২২ সালের মধ্যে ৩৪টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে রয়েছে সংঘর্ষ, লাইনচ্যুত, ট্রেনে আগুন বা বিস্ফোরণ, লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের সাথে রাস্তার যানবাহন সংঘর্ষ ইত্যাদি- সংখ্যার হিসেবে আগের বছরের তুলনায় ২৭টি বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত ৩১শে মে ‘দ্য হিন্দু’ সংবাদপত্র জানিয়েছে যে ২০২২-২৩ সালে এই ধরনের দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে ৪৮টি হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877